অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : সংসদে সংরক্ষিত আসনের দাবি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) অন্যান্য কমিশনারদের সঙ্গে দেখা করেছেন তৃতীয় লিঙ্গের একটি প্রতিনিধি দল।
সারাদেশ থেকে অন্তত তিনটি আসন চান তারা। এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র করাতে গিয়ে নানারকম বিড়ম্বনার সমাধান চান তারা।
বুধবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তৃতীয় লিঙ্গ ও ট্রান্সজেন্ডারদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা ‘সুস্থ জীবন’ নামে একটি বেসরকারি কমিউনিটিভিত্তিক সংস্থা সিইসির কাছে এসব দাবি জানায়।
এ সময় সিইসির কাছে একটি স্মারকলপিও জমা দেন সংস্থাটির প্রতিনিধিরা। বৈঠকে ইসি আহসান হাবিব ও রাশেদা সুলতানা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে শেষে সুস্থ জীবনের চেয়ারম্যান পার্বতী আহমেদ বলেন, আমাদের দাবি হলো—সবার অংশগ্রহণে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসন পূর্ণ হবে। তৃতীয় লিঙ্গদের সারাদেশে যেন অন্তত তিনটি আসন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘লিভ নো ওয়ান বিহাইন্ড’, কাউকে বাদ দিয়ে নয়। জাতীয় সংসদে নারী ও পুরুষ সংসদ সদস্যরা আছেন, তাহলে আমরা কোথায়? আমাদের দাবি-দাওয়া এবং আমাদের নিয়ে কাজ করার জন্য একজন প্রতিনিধি দরকার। আমাদের চাহিদা ও সুযোগসুবিধাগুলো অন্যরা কিন্তু সেভাবে বোঝেন না। যার ব্যথা সেই বোঝে।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অনেকেই শিক্ষিত রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে এখন অনেক শিক্ষিত মানুষ আছেন। নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটে একজন চেয়ারম্যান হলেন। আমাদের দায়িত্ব দেওয়ার হলে অবশ্যই আমরা দায়িত্ব পালন করতে পারব। সমাজে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে যে নেতিবাচক মনোভাব আছে তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমাদের যদি সুযোগ দেওয়া হয় অবশ্যই আমরা কাজ করে প্রমাণ দেখাব। আমরা সমাজের মূল ধারায় চলে আসব।
বৈঠকের ব্যাপারে সুস্থ জীবনের চেয়ারম্যান বলেন, স্যাররা আমাদের বলেছেন কি করা যায় তারা তা দেখবেন। এছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই ধরনের বৈঠক করতে বলেছেন। সংবিধান কি বলে এই রকম দিকগুলোই তারা দেখবেন।
পার্বতী আহমেদ বলেন, ভোটার আইডি কার্ড তৈরি ও সংশোধন নিয়েও কথা বলেছি। আমাদের অনেকেরই পুরুষ আইডি কার্ড আছে। এখন সেটা নিয়ে কোথাও গেলে সেটা গ্রহণ করে না। কারণ আইডি কার্ড একরকম, আর তাদের দেখতে আরেক রকম। তাই আমাদের অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়। চাকরির ক্ষেত্রেও নিতে চায় না। এতে অনেক বৈষ্যমের শিকার হয়েছি। সিভিল সার্জন অফিস ও সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে আমাদের কাপড় খুলে দেখেছে। সেখানে আমাদের মানসিক ও মানসম্মানে খুব আঘাত লেগেছে।
তিনি বলেন, সব জায়গাতেই আমাদের অভিভাবকের প্রয়োজন হয়। অভিভাবকরা তো আমাদের আরও ১০-১৫ বছর আগে ছেড়ে দিয়েছে। পরিবার তো আমাদের রাখে না। তাহলে কীভাবে অভিভাবক নিয়ে যাব? পাশাপাশি প্রথম শ্রেণির হাকিম দিয়ে আমাদের এফিডেফিট করতে হয়।
তিনি আবার থানায় পাঠান। এজন্য অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়। সিইসি স্যার ও অন্যান্য স্যাররা বলেছেন তারা বিষয়গুলো দেখবেন। দরকার হলে আমাদের জন্য নতুন একটা পলিসি করে দিন যাতে হয়রানির শিকার হতে না হয়।
এসময় সুস্থ জীবনের সাধারণ সম্পাদক ববি ও কমিউনিটি লিয়াজু অফিসার জোনাকী জোনাক উপস্থিত ছিলেন।
সিইসির কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, সুস্থ জীবন একটি বেসরকারি কমিউনিটিভিত্তিক সংস্থা, যা ২০০৫ সালে সরকারি অনুমোদনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে।
সুস্থ জীবন তৃতীয় লিঙ্গ ও ট্রান্সজেন্ডারদের জীবনমান উন্নয়নে মানবাধিকার এবং সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সংস্থাটির বহুমাত্রিক কাজের ফলগুলো সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছাতে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখছে।
বর্তমান সময় তৃতীয় লিঙ্গ ও ট্রান্সজেন্ডার নারীদের অনেকটা ইতিবাচক গ্রহণযোগ্যতা পেলেও তা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ের নয়। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এই জনগোষ্ঠীর একজন প্রতিনিধির অংশগ্রহণ ছাড়া সম্পূর্ণভাবে যাবতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
তাই উন্নয়নকে তরান্বিত করতে সম্মিলিত সহযোগিতা প্রয়োজন। এই স্বারক লিপির মাধ্যমে বাংলাদেশের পবিত্র সংসদে আমাদেরও উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে আপনি আপনার সহযোগিতা ও পূর্ণ সমর্থন পাব বলে আশা করি।
Leave a Reply